Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বছরব্যাপী পিয়াজ সরবরাহে বারি পাতা পিয়াজ-১

ড. মো: আলাউদ্দিন খান১ মো: মুশফিকুর রহমান২
পাতা পিয়াজ (
Allium fistulosum L.) একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। ইহা Japanese bunch ing onion নামেও পরিচিত। এ প্রজাতির গাছের মূলত দুইটি অংশ-সবুজ পাতা ও সাদা মোটা সিউডোস্টেম (Blanched pseudostem)। এ জাতীয় পিয়াজে সাধারণ বাল্ব পিয়াজের (Allium cepa L) মত বাল্ব উৎপাদন হয় না। তবে সাদা সিউডোস্টেমের গোড়ায় বাল্বের মত বৃদ্ধি  (Bulb enlargement) পরিলক্ষিত হয়। এ প্রজাতির গাছ বহুবর্ষজীবী। বীজ সংগ্রহের পর পুনরায় কুশি উৎপাদনের মাধ্যমে রেটুন ফসল (Ratoon crop) হিসেবে চাষ করা যায়। ফলে একবার কোন জমিতে এ ফসল চাষ করলে নতুন করে ঐ জমিতে বীজ বপন বা চারা রোপণ করার প্রয়োজন হয় না। কেবলমাত্র পুরাতন গাছ উঠিয়ে এবং আগাছা নিড়িয়ে ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে বছরের পর বছর রেটুন ফসল চাষ করা সম্ভব।


বীজ বা কুশির মাধ্যমে পাতা পিয়াজের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। এ ফসলটির কুঁশি উৎপাদনের প্রবণতা খুবই বেশি। এ প্রজাতিটি পার্পল বøচসহ বিভিন্ন রোগ সহিঞ্চু/প্রতিরোধী (Tolerant/ resistant)। এর পাতা ও ফুলের দণ্ড (Scape) ফাঁপা। এলাইল প্রোপাইল ডাইসালফাইড থাকার কারণে এর স্বাদ ও গন্ধ সাধারণ পিয়াজের মতো। এ মসলাটি রন্ধনশালায় (Culinary) ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মূল বা হলুদ পাতা ছাড়া ফুলের দণ্ডসহ সমস্ত অংশই বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যকে রুচিকর ও সুগন্ধপূর্ণ করে তোলে। ইহা সালাদ হিসেবে কাঁচা অথবা বিভিন্ন তরকারি/অন্যান্য খাবারের সাথে সিদ্ধ করে খাওয়া হয়ে থাকে। ইহা ভর্তা হিসাবেও খাওয়া যায়। সাধরণত মোটা সাদা সিউডোস্টেম মাংস বা অন্যান্য তরকারিতে এবং সবুজ পাতা সালাদ হিসেবে অথবা সুপ, নুডুলস, স্যান্ডউইজ ইত্যাদি খাবারকে সুগন্ধ করার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে। ইহার যথেষ্ট পুষ্টিগুণ রয়েছে। পাতা পিয়াজের প্রতি ১০০গ্রাম ভক্ষণযোগ্য অংশে আর্দ্রতা (৭৮.৯%), আমিষ  (১.৮%)চর্বি (০.১%), খনিজ পদার্থ (০.৭%), শর্করা (১৭.২%), ক্যালসিয়াম (০.০৫%), ফসফরাস (০.০৭%), লোহা (২.৩ মি.গ্রাম),  ভিটামিন-এ (৩০ আইইউ), ভিটামিন-বি১ (০.২৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি (১১ মিলিগ্রাম) ও এনার্জি (৩৪ কিলোক্যালরি) আছে। এর অনেক ঔষধি গুণাবলিও রয়েছে। ইহা পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। মাথাব্যথা, বাতের ব্যথা ও ঠাণ্ডাজতি রোগ থেকে উপশমে    সহায়তা করে। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি এ পিয়াজ খেলে রোগ থেকে উপশম পেয়ে থাকেন। সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে গোছা (ঈষঁসঢ়) আকারে পাতা পিয়াজের যথেষ্ট আকর্ষণ রয়েছে। নিচে এ জাতের পিয়াজের উৎপাদন কলাকৌশল বর্ণনা করা হলো।


মাটি ও আবহাওয়া
পাতা পিয়াজ সকল ধরনের মাটিতে জন্মে থাকে তবে বেলে দো-আঁশ ও পলি-দো-আঁশ মাটিতে ভালো ফলন দিয়ে থাকে। তবে উচ্চ এসিড ও ক্ষার মাটিতে ভাল জন্মে না। গাছ সুন্দরভাবে বৃদ্ধির জন্য মাটি ঢ়ঐ৫.৮-৬.৫ থাকা ভালো। প্রচুর পরিমাণে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিই উত্তম। পাতা পিয়াজের জমিতে সুনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। ইহা ঠাণ্ডা ও গরম উভয় তাপমাত্রায় জন্মাতে পারে। অন্যান্য
Allium spp. প্রজাতির তুলায় এ প্রজাতির পিয়াজের গাছ ভারী বৃষ্টির প্রতি অনেক সহিঞ্চু। জমিতে প্রতিষ্ঠিত পাতা পিয়াজের গাছ খরার প্রতিও সহিঞ্চু। দিবা দৈর্ঘ্য বেশি হলেও এ পিয়াজের গাছের বৃদ্ধি হতে থাকে অর্থাৎ আমাদের দেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালেও এ পিয়াজের চাষ উপযোগী। এ প্রজাতির পিয়াজে নিম্ন তাপমাত্রায় ও ছোট দিনে ফুল আসে।


বীজ বপন ও চারা উত্তোলন
ফেব্রæয়ারি-এপ্রিল মাসের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। তবে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বীজ বপন করলে কিছুদিন পরেই ফুল আসা শুরু হয়। সারি পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টর জমির জন্য ৪-৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বপন করলে হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি বীজের দরকার হয়। বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে পরে ১২ ঘণ্টা শুকনা পাতলা কাপড়ে বেঁধে রেখে দিলে বীজের অংকুর বের হয়। বীজতলায় পচা গোবর সার দিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরি করা হয়। বিভিন্ন ধরনের পোকা ও ক্রিমি দমনের জন্য বীজতলায় ফুরাডান ব্যবহার করাই ভালো। পরে বীজতলায় বীজ সুষমভাবে ছিটিয়ে দিয়ে তার ওপর ০.৪-০.৫ সেমি. ঝুরঝুরে মাটি প্রয়োগ করে কলাগাছ/হাত দিয়ে বীজতলা চাপ দিতে হয়ে। বীজতলায় আগাছা নিড়ানোসহ অন্যান্য পরিচর্যা করা হয়। চারার বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে মূল জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়। চারা উত্তোলনের পর চারার ওপর থেকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছেঁটে ফেলে দিয়ে চারা লাগাতে হয়। এর ফলে লাগানোর পরে চারা থেকে কম পরিমাণে পানি বের হয় এবং চারা জমিতে ভালোভাবে লেগে উঠে। এক হেক্টর জমির জন্য ৬-৬.৫ লক্ষ চারার প্রয়োজন হয়।


জমি তৈরি ও চারা রোপণ
মূল জমিতে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। চাষের আগে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পচা গোবর সার দিতে হয়। এ প্রজাতির পিয়াজে কুশি উৎপাদনের প্রবণতা বেশি থাকায় সাধারণ বাল্ব পিয়াজের তুলনায় রোপণ দূরত্ব বেশি দিতে হয়। এর চারা বা  কুশি ২০ সেমি. x ১৫ সেমি. অথবা ২০ সেমি. x ২০ সেমি. দূরত্ব বজায় রেখে রোপণ করা হয়। চারা একটু গভীরে লাগানো ভালো।

 

সার প্রয়োগ
জমির উর্বরতার ওপর ভিত্তি করে সারের পরিমাণ নিরূপণ করতে হয়। পাতা পিয়াজ উৎপাদনের জন্য জমিতে পচা গোবর সার ৪০০০-৫০০০, ইউরিয়া ১৫০-২০০, টিএসপি ১৫০-২০০, এমওপি ১০০-২৫০ এবং জিপসাম ১০০-১২০ কেজি/হেক্টর প্রয়োগ করতে হয়। জমি চাষের আগে সম্পূর্ণ পচা গোবর সার এবং শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া সার সমান দুইভাগ করে চারা রোপণের ৩০ ও ৬০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগের পর প্রয়োজন হলে পানি সেচ দিতে হবে।

 

রোগবালাই দমন
পাতা পিয়াজ পার্পল বøচ ও অন্যান্য বøাইট রোগের প্রতি প্রতিরোধী। তবে কোন রোগ দেখা দিলে রিডোমিল গোল্ড/ডাইথেন এম-৪৫/ রোভরাল এর যে কোনো একটি বা একাধিক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ২-৩ বার ১৫ দিন পরপর স্প্রে করা যেতে পারে। থ্রিপস ও কাটুই পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এ সমস্ত পোকা দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। থ্রিপস দমনের জন্য এডমায়ার বা টিডো (১ মিলি/লিটার) ১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। তাছাড়া রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনের জন্য আগাছা পরিষ্কার, আবর্জনা আগুনে পোড়া, শস্যাবর্তন ইত্যাদি সমন্বিত ব্যবস্থা করা উত্তম।

 

ফসল সংগ্রহ ও ফলন
পাতা পিয়াজ সংগ্রহকালীন সময় ইহার মাটির উপরের সম্পূর্ণ অংশ সবুজ ও সতেজ থাকতে হবে। চারা রোপণের দুই মাস পরেই প্রথমে পাতা সংগ্রহ করা যায়। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল মাসে বীজ বপন করলে নভেম্বর পর্যন্ত গাছ থেকে গড়ে ৩-৪ বার পাতা খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করা যায় অথবা যেকোন সময় সম্পূর্ণ গাছ উঠিয়ে খাওয়া যায়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বীজ বপন করলে সেখান থেকে পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। কারণ ডিসেম্বর থেকে ফুল আসা শুরু হয়। প্রথমে সংগ্রহের ২০-২৫ দিন পরপর পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছটি তুলে মূল এবং হলুদ পাতা  কেটে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। ছোট ছোট আটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করা যায়। প্রতি হেক্টর জমিতে ৭.৫-৮.৫ টন পাতা এবং সাদা অংশসহ ১২-১৫ টন ফলন পাওয়া যায়।

 

বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ
ফেব্রæয়ারি থেকে নভেম্বর মাসের যখনই বীজ বপন করা হোক না কেন মূল জমিতে রোপণের পর ডিসেম্বর মাসে পাতা পিয়াজের ফুল আসা শুরু হয়। ইহা পরপরাগায়িত ফসল। তাই জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য একটি জাতের মাঠ থেকে অন্য জাতের মাঠের দূরত্ব কমপক্ষে ১০০০ মিটার বজায় রাখতে হবে। সকল আম্বেলের (কদম) বীজ একসাথে পরিপক্ব হয় না। তাই কয়েক দিন পরপর পরিপক্ব আম্বেল সংগ্রহ করা হয়। একটি আম্বেলের মধ্যে শতকরা  ১০-১৫টি ফল ফেটে কালো বীজ দেখা গেলে আম্বেলটি কেটে বা ভেঙে সংগ্রহ করতে হবে। মাঠে সমস্ত আম্বেল সংগ্রহ করতে ৪-৫ দিন সময় লাগতে পারে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সামান্য দেরিতে বীজ সংগ্রহ করলে আম্বেল থেকে সমস্ত বীজ ঝড়ে মাঠিতে পড়ে যায়। পাতা পিয়াজের বীজ সধারণত ফেব্রæয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বীজ আম্বেল সংগ্রহ করার পর রোদে শুকিয়ে হালকা লাঠি দ্বারা পিটিয়ে বীজ বের করা হয়। পরে বীজ রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে ছিদ্রবিহীন পলিথিন বা টিনের পাত্রে সংরক্ষণ করা উত্তম। হেক্টর প্রতি ৮০০-৯০০ কেজি বীজ উৎপাদন হয়ে থাকে।

 

এ দেশে বাল্ব পিয়াজের যথেষ্ট ঘাটতি থাকার কারণে পিয়াজের সারাবছর চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে বসতভিটাসহ মাঠপর্যায়ে সারাবছর (Year-round) এ জাতের চাষ করা সম্ভব। এ ছাড়াও পাতা পিয়াজ বাসাবাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে ও টবেও চাষ করা যায়। আশা করা হচ্ছে এ জাতের পাতা পিয়াজ চাষের মাধ্যমে একদিকে সাধারণ বাল্ব পিয়াজের পরিবর্তেও এটি ব্যবহার করা যাবে। পাতা পিয়াজ তরকারিতে ব্যবহার করলে সাধারণ পিয়াজ ব্যবহারের কোনো প্রয়োজনই হয় না। অন্য দিকে সাধারণ বাল্ব পিয়াজের সাথে সংকরায়নের মাধ্যমেও রোগমুক্ত উন্নত জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে। যেহেতু সহজেই সারাবছর বারি পাতা পিয়াজ-১ চাষ করা সম্ভব সেহেতু পিয়াজের বিকল্প হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। বিধায় বাংলাদেশে পিয়াজের ঘাটতি মিটাতে পাতা পিয়াজ চাষের কোনো বিকল্প নেই। এক হেক্টর জমিতে পাতা পিয়াজ উৎপাদন খরচ হয় ৮৫,০০০-৯০,০০০ টাকা এবং খরচ বাদে ১,৫০,০০০-২,০০,০০০ টাকা আয় করা সম্ভব।
 ১ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,  মোবাইল : ০১৭১১৫৭৩৩৬১, ই-মেইল : khanalauddirsrsc@gmail.com,  ২বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা উপকেন্দ্র, বিএআরআই, ফরিদপুর, মোবাইল : ০১৭২৩৮৭৯৪৫৩৮,  ই-মেইল : musfiqur bari@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon